মুন্সিগঞ্জ সদরের মোল্লাকান্দিতে ৩ মাসের মধ্যে আমেরিকা নেয়ার কথা বলে ৯৭ লাখ টাকা নেয়ার পর বিদেশে না নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে কালাচাঁন গাজী ও তার পুত্র মির্জা হাসান গাজি নামের দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
মুন্সিগঞ্জে ৩ মাসের মধ্যে আমেরিকা নেয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগ
এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফা সালিশ-মীমাংসা হলে চলতি বছরের মে মাসে ২২ লাখ টাকা ফেরত দেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। এরপর থেকে বাকি ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ না করে উল্টো হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে বলে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শাহিন হোসেন।
অভিযোগ করে ভুক্তভোগী শাহিন বলেন, ‘সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের গজারিয়াকান্দি এলাকার কালাচাঁন গাজী ও তার পুত্র মির্জা হাসান গাজি ২০২১ সালে আমিসহ পরিবারের ৫ সদস্যকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া এবং ৩ মাসের মধ্যে গ্রিণকার্ড (স্থায়ী নাগরিকত্ব) দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রত্যেকের জন্য ২০ লাখ করে সর্বমোট ৯৭ লাখ টাকা দুই দফায় নগদ আদায় করেন।’
‘কালাচাঁনের কথা অনুযায়ী আমি, আমার বোন তানিয়া বেগম (৩৬), বোন জামাই শরিফ লস্কর (৪২), ভাগ্নী সুরাইয়া আক্তার সুরভী (১৪), ভাগ্নে আল আলী সৌরভের (১২) এক সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট বানানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি শুরু করি এবং শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট বানাতে সক্ষম হই।’
‘পাসপোর্ট বানানোর আগেই কালাচাঁন ও তার পুত্র মির্জা হাসান গাজি আমাদের কাছ থেকে দুই দফায় নগদ ৯৭ লাখ টাকা আদায় করেন। এরপর তারা একটি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাসপোর্টগুলো আমেরিকায় তাদের লোকের ঠিকানায় পাঠাতে বলে। তাদের দেয়া ঠিকানায় পাসপোর্ট পাঠালেও ৩ মাস পর কোন ভিসা ছাড়াই পাসপোর্ট ফেরত আসে।’
ভুক্তভোগী শাহিন অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘এরপরও পিতা-পুত্র আমাকে দফায় দফায় আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখায়। ৩ দফায় গুলশান এলাকায় আমেরিকার ভিসা সেন্টারে পাঠায় আমাকে। একবারও আমি ভেতরে ঢুকতে পারিনি। পরে বাড়ি ফিরে আসার পর সে আমাকে বলে ইমার্জেন্সি মার্কেট করতে। এক সপ্তাহের মধ্যে নাকি আমার আমেরিকার ভিসা হয়ে যাবে।
আমি তার কথা বিশ্বাস করে ২ লাখ টাকার মার্কেট করি এবং পাসপোর্ট তাদের দেয়া আমেরিকার ঠিকানায় আবারও কুরিয়ার করি। কিন্তু দেড় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আবারও ভিসা ছাড়াই পাসপোর্ট দেশে ফেরত আসে। এরপর আমরা বুঝতে পারি তারা আসলে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছেন। পরে আমরা ভিসার বিনিময়ে পরিশোধকৃত টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ জানালে তারা নানারকম তালবাহানা শুরু করেন।’

‘এভাবে কেটে যায় দীর্ঘ ৩ বছর। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে লিখিতভাবে অবহিত করলে এ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একাধিকবার পাওনা আদায়ের চেষ্টা চলে। সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসে ২২ লাখ টাকা ফেরত দেন অভিযুক্ত কালাচাঁন গাজী ও তার পুত্র মির্জা হাসান গাজি।
একইসাথে মির্জা হাসান গাজি তার সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের ৩ টি চেক যথাক্রমে আমার নামে ২০ লাখ টাকার (সিবি-এসবি ২৬৫০৪৫৫) একটি ও ৩৫ লাখ টাকার আরেকটি (সিবি-এসবি ২৬৫০৪৫৭) এবং আমার বোন তানিয়া বেগমের নামে ২০ লাখ টাকারসহ (সিবি-এসবি ২৬৫০৪৫৬) সর্বমোট ৭৫ লাখ টাকার ৩টি চেক দেন। কিন্তু সিটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ওই অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই।’
ভুক্তভোগী বলেন, ‘বর্তমানে কালাচাঁন গাজী ও তার পুত্র মির্জা হাসান গাজি বাকি ৭৫ লাখ টাকা তো দিচ্ছেনই না উল্টো আমাদের বিভিন্ন ধরনের হামলা-মামলার হুমকি দিচ্ছেন।’ এ বিষয়ে অভিযুক্ত কালাচাঁন গাজীর সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অপর অভিযুক্ত মির্জা হাসান গাজি আমেরিকায় নেয়ার কথা বলে টাকা নেয়া ও হুমকির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সাথে হুন্ডি সংক্রান্ত লেনদেন ছিলো। আমার ভাই বিদেশ থেকে পাঠিয়েছে বলে তারা আমাদের ২২ লাখ টাকা দিয়েছিলো। সেই টাকা পরে আবার তারা জমি লিখে নেয়া বাবদ আদায় করেছে। বরংচ দামি জায়গাটা কম দাম ধরে তাদের লিখে দিয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা কোন হুমকি দেইনি। উল্টো টাকা পাওনাদার দাবি করে আমাদের বাড়িতে লোকজন নিয়ে এসে দফায় দফায় হুমকি দিচ্ছে তারা।’
আরও দেখুনঃ