অসময়ে পদ্মায় ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসীর,বর্ষার আগেই এবার মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অসময়ের এ ভাঙনে গত কয়েক দিনে উপজেলার গাঁওদিয়া, বড় নওগাঁও, সুন্দিসার, বেজগাঁও, লৌহজং-তেওটিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে বিলীন হয়েছে ভিটেমাটি-কৃষি জমি, গাছপালাসহ নানা স্থাপনা। ঢেউয়ের সঙ্গে ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে এখন নদী তীরের লাখো মানুষ। অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি-স্থাপনা।
অসময়ে পদ্মায় ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসীর
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের প্রভাবে অসময়ে এমন ভাঙন দেখা দিয়েছে।সরেজমিনে উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একদিকে নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে ভেঙে পড়ছে তীরের জমির অংশ, অন্যদিকে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে ঘর-বাড়ি স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন স্থানীয়রা। গত ১৫ মে থেকে হঠাৎ নদীর এমন আগ্রাসী রূপে হতভম্ব সবাই।
বেজগাঁও ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মোবারক মুন্সী বলেন, আমার ৩ ঘণ্ডা জমি ছিল, ভাঙতে ভাঙতে এখন ১ ঘণ্ডা আছে। গত ক’দিন আবারো ভাঙন শুরু হয়েছে, এখন বাকি জায়গাটুকু থাকবে কিনা তাও বুঝতেছি না। টিনের ঘর ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছি। শত শত মানুষ এখন একই সমস্যায়।ময়না বেগম বলেন, ‘৩-৪ দিন ধরে নদী ভাঙছে। আমরা শুনছি বাঁধ দেবে, কিন্ত বাঁধ আর হয় না। রাতে বড় বড় ঢেউ আসে, আতংকে ঘুম আসে না। আমাগো বাপ-
দাদার ভিটা চোখের সামনে শেষ হইতাছে। বাচ্চাদের নিয়ে কই থাকুম সেই চিন্তায় এখন দিশেহারা।’সুন্দিসার এলাকার বাদশা সরদার বলেন, ‘আগে বর্ষা-বন্যায় নদী ভাঙতো। এখন বর্ষা আসার আগেই ভাঙতাছে। মাঝ নদীতে শত শত ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হয়। বালু কাইটা নিতাছে বালুদস্যুরা আর ভাঙতাছে আমাগো জমি। এই ড্রেজারগুলো বন্ধ করা লাগবো।’
স্থানীয় সূত্র বলছে, গত তিন দশকে ভাঙনে এ উপজেলার কয়েক ডজন গ্রাম পুরোপুরি বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। বর্ষা আসার আগেই ভাঙন পরিস্থিতি রোধ করা না গেলে এবার বর্ষায় ভয়াবহ অবস্থা দাঁড়াবে।এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, এখন যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেটি নদীর ঢেউয়ের কারণে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, উপরের অংশটুকুতেই শুধু ভেঙেছে। আমাদের উদ্যোগ রয়েছে, আগামীকাল (আজ) থেকে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলা হবে।
তিনি বলেন, লৌহজংয়ে গত ৬ মাসে অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে সর্বমোট ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখন লৌহজং অংশের নদীতে কোথাও অবৈধ বালু উত্তোলন নেই। আশপাশের শরীয়তপুর, শিবচর অংশে থাকতে পারে। তবে সেগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
6 thoughts on “অসময়ে পদ্মায় ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসীর”